Continued From

 

 

দ্বিতীয় পর্ব:

যতই শক্তিশালী হন না কেন, কৃষ্ণের (দেবশ্রেষ্ঠ বিষ্ণু) সাথে এঁটে উঠবেন কেন বাণাসুর। সুদর্শন চক্র দ্বারা তার হাতগুলো একে একে কাটা পড়তে থাকে। শেষে শিবের অনুরোধে দুটো হাত শুধু অক্ষত রয়ে যায়। বাণাসুরের গর্ব হলো খর্ব। পরাজিত, অপমানিত বাণাসুর বাধ্য হলেন অনিরুদ্ধকে মুক্তি দিতে। সন্ধির শর্তানুযায়ী ভগ্নহৃদয় বাণাসুর, ঊষা ও অনিরুদ্ধর বিবাহ দেন ও নবদম্পতিকে কৃষ্ণের সাথে দ্বারকা যাওয়ার অনুমতি দেন। এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং শিব। ঊষার চলে যাওয়াতে শোকগ্রস্থ শোণিতপুরবাসী, রাজ্যের নাম পাল্টে রাখেন ঊষামঠ।  পরে কালক্রমে তা হয় ঊখীমঠ। ঊখীমঠে শিব ও কৃষ্ণের (বিষ্ণু) সাক্ষাৎ স্থল হওয়ায়, শৈব ও বৈষ্ণব মিলনক্ষেত্রও বটে। লক্ষ্য করবার মতো বিষয় শোনিতপুর ভারতে আসাম ও হিমাচল প্রদেশও রয়েছে (এটা আমার জ্ঞাতার্থে, আরও এমন শোনিতপুর ভারতে আরো থাকলেও থাকতে পারে) এবং প্রতিটির আখ্যান একই।

সকাল ৮টা। নাজিবাবাদে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। উপায়ান্তর না দেখে সাড়ে ৮ টার সময়ে ম্যাপ খুলে বসলাম। শুধুমাত্র ম্যাপে উল্লিখিত এপ্রক্সিমেট দূরত্বের উপর ভরসা করে সেদিন নাজিবাবাদ থেকে নেমেছিলাম। সাথে পরিবার থাকলে এই রিস্ক নিতে পারতাম না। নাজিবাবাদ স্টেশন থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞাসা করে শেয়ার জীপ-এ কোটদ্বার এলাম। দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। খঃ [খো] নদীর তীরে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ছোট্ট শহর কোটদ্বার। লোকমুখে এখানকার সিদ্ধাবলি (হনুমান) মন্দিরের কথা শুনেছিলাম। জানলাম কোটদ্বার থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে থালিসান ব্লকে আরেকটি মন্দিরের কথা, যেখানে শিবের সাথে রাহুর পুজো হয়। মন্দিরটি “রাহু” মন্দির নামেই পরিচিত। সত্যি কি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ আমাদের। সময় ও সুযোগের অভাবে এই দুটি  মন্দিরের কোনোটিতেই আমি যেতে পারি নি। তবে আরকিছু না হোক, কোটদ্বারের আলুপরোটার আর চাটনির স্বাদ ভোলা মুস্কিল। ব্রেকফাস্ট সারলাম তাই দিয়েই।

Ukhimath Scenic 1

এবার গন্তব্য শেয়ার জীপ এ পৌরি।  কোটদ্বার থেকে পৌরির দূরত্ব ১০৫ – ১১০  কিলোমিটার। লেগে গেলো প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা। পৌরি জেলাশহর। বেশ সাজানো গোছানো পরিচ্ছন্ন শহর। উচ্চতা ৫,৯৫০ ফুট। শুনলাম নন্দাদেবী, ত্রিশূল, গঙ্গোত্রীশ্রেণী এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। যদিও আবহাওয়া খুব পরিষ্কার না থাকায় আমার দেখবার সৌভাগ্য হয় নি। আমি সাজেস্ট করবো পৌরিতে এক-দুই রাত থাকার জন্য। কাছাকাছি প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। আর এখান থেকে মাত্র ৮০ – ৮৫ কিলোমিটার দূরে ল্যান্সডাউন, আরেকটি হট হিল-স্টেশন। ঘড়িতে সময় পৌনে দুটো। পাহাড়ের নিরিখে বেলা যথেষ্ট বেশি। দুপুরের খাবার জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হলো। কোনোরকমে ভাত রুটি রাজমার তরকারি মিলিয়ে মিশিয়ে খেয়ে পৌরি থেকে উখীমঠ যাওয়ার শেষ বাস-এ উঠলাম। পৌরি থেকে অলকানন্দার (অলকানন্দা আর মন্দাকিনীর মিলিত স্রোত) ধার ঘেসে শ্রীনগর হয়ে পৌঁছে গেলাম রুদ্রপ্রয়াগ। এই রুদ্রপ্রয়াগেই মন্দাকিনী এসে মিশেছে অলকানন্দার সাথে। দুটোই পার্বত্য নদী; অথচ মন্দাকিনী সদাপ্রাণচঞ্চল, সদ্য যৌবনা কিশোরী যেন — নুপুর পরে নাচতে নাচতে চলেছে। আর অলকানন্দা যেন বড় বোন, তাই সে শান্ত স্থিতধী। মন্দাকিনীর জলে সবুজতা বেশি, অলকানন্দা ঈষৎ নীলচে সবুজ।  সঙ্গম বা প্রয়াগে উভয়ের জলের পার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যায়।  একইরকম পার্থক্য করা যায় দেবপ্রয়াগেও।  যেখানে ভাগীরথী (গোমুখ থেকে দেবপ্রয়াগ অবধি প্রবাহের নাম ভাগীরথী; দেবপ্রয়াগের পর থেকে ভাগীরথী, অলকানন্দা ও মন্দাকিনী, এই তিন প্রবাহের মিলিত নাম গঙ্গা) মিলিত হয়েছে অলকানন্দার সাথে। রুদ্রপ্রয়াগে বাস মিনিট দশেক দাঁড়ালো। ফলে এলাচ দেওয়া কড়া চা খাওয়ার সুযোগ জুটে গেলো। এখান থেকেই রাস্তা ভাগ হয়েছে কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ যাওয়ার জন্য। একটা অলকানন্দার গা ঘেসে নিয়ে যাবে বদ্রীনাথ, অন্যটি মন্দাকিনীকে সাথে করে নিয়ে যাবে কেদারনাথ। আমরা মন্দাকিনীর সাথে ধীরে ধীরে পৌঁছে যাবো অগস্ত্যমুনি, কুণ্ডচটি হয়ে বাণাসুরের শোণিতপুরে, আজকের ঊখীমঠে ।

পৌরি থেকে রুদ্রপ্রয়াগের দূরত্ব ৬৫-৭০ কিলোমিটার আর রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ঊখীমঠ ৪০-৪৫ কিলোমিটার। এটা মনে রাখার বিষয়, পাহাড়ের দূরত্বের পরিমাপের সাথে আমাদের সমতলের মানুষের দূরত্বের হিসাব আলাদা, সেটা ট্রেক করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। যখন ঊখীমঠ পৌছালাম সন্ধে নামছে। যদিও ঠান্ডা তেমন নেই। মূল শহর থেকে সামান্য দূরে বলে ভারত সেবাশ্রম সংঘে উঠলাম না। ঊখীমঠ বাস স্টপে সবে নেমেছি, অন্ধকার নামবে নামবে করছে, এমন সময় কপালে তিলক পরা শীর্ণকায় এক মূর্তির উদয় হলো, বললো – “আমার নাম সচ্চিদানন্দ মৈঠানি, সামনেই আমার লজ – “মৈঠানি লজ”, ভাড়া বেশি নয় মাত্র ১০০ টাকা, এসে একবার দেখে যেতে পারেন”। এ যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা। গিয়ে দেখি কার্পেট পাতা সুন্দর পাকা ঘর, যদিও কমন বাথরুম। কিছুক্ষন শরীর এলিয়ে বিশ্রাম করে রাতের খাবারের সন্ধানে বেরুলাম। বেরিয়েই দেখলাম ওই পারে জ্বল জ্বল করছে গুপ্তকাশীর ঘর-বাড়ির আলো। দূর থেকে ভেসে আসছে কোনো অখ্যাত মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মন্দাকিনীর অবিরাম কুলু কুলু স্রোতের শব্দ। চান্দ্র-বন্যায় যেন উদ্বেলিত শৃঙ্গ রাজী। মৃদুমন্দ হিমেল বাতাসে আন্দোলিত বৃক্ষরাশি। হালকা কুয়াশার চাদর বড়ো মমতা ভরে সবে আচ্ছাদিত করতে আসছে ধরণীকে। এক অবর্ণনীয় নৈসর্গিক দৃশ্য। সময় যেন থমকে গেছে। কিন্তু ক্ষুধার রাজ্যে সবই গদ্যময়। পেটে ছুঁচোর কীর্তন। ঘড়িতে সময় ৮টা। প্রায় জন-মানবহীন শুনশান রাস্তা। খুব কম দোকানই খোলা আছে।

“অতিথি নারায়ণ, আপনি খাওয়ার আগে আমি খাই কি করে?” মদ্যপ হোটেল মালিক প্রায় ঘাড় ধরে তার পাতে আমায় বসিয়ে দিলে। এক খাবলা মাখন তুলে আমার ভাতে দিয়ে হাত জোর করে বললে, “আজ একটু কষ্ট করে খান, কাল ভালো ব্যবস্থা করা যাবে, তবে এখানে নিরামিষ ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না”। দেবভূমির মাহাত্মই আলাদা। এনারা বিত্তহীন হতে পারেন, চিত্তহীন নন। কথা না বাড়িয়ে হাত আর মুখের কাজে মন দিলাম। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে দেখা হয়ে গেলো ট্রেনে আলাপ হওয়া ঊখীমঠের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী যুবকের সাথে। সে তখন সবে ঊখীমঠ ঢুকছে, হরিদ্বার হয়ে, বললো “এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছালেন কি ভাবে”। সব শুনে বললেন যে এমন রুট তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন নি। রাতে খুব একটা ঠান্ডা পড়ে নি, একটা চাদরই যথেষ্ট; মৈঠানিজী দুঃখ করে বলেছিলেন গত কয়েক বছর সেরকম ঠান্ডা নাকি পড়ছে না। যাক, ভূ-উষ্ণায়নের প্রভাব অনেকদূর পৌঁছে দিতে পেরেছি।

ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ। তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ, যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, সেই জায়গাটা সম্পর্কে আগেই ওয়াকিবহাল হন। সংশ্লিষ্ট জায়গার ভিউ পয়েন্ট, আবহাওয়া, মানুষজন সম্পর্কে সম্যক পড়াশোনা করে যান – ভালো হয় কি ভাবে ঘুরবেন, তার একটা ছক কষে নিন আগে থেকেই, তাহলে কেউ আপনাকে মিসগাইড করতে পারবে না। যে রুটে আপনাদের সাথে ঊখীমঠ গেলাম, সেটা সর্বসাধারণের জন্য নয়। হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে ঊখীমঠ যাওয়াই সহজতম পথ। সে ক্ষেত্রে দূরত্ব পড়বে ২০৫-২১০ কিলোমিটার (হৃষিকেশ হলে ১৮০ কি.মি.)। সাত থেকে সাড়ে সাত ঘন্টা সময় লাগবে ।

ভোর বেলা হোটেলঘর থেকে বেড়িয়েই মনটা ভালো হয়ে গেল। পরিষ্কার নীল আকাশ। সূর্যদেব সবে দেখা দিয়েছেন। তার প্রথম ছটা এসে পড়েছে কেদারডোমের উপর। অসাধারণ স্বর্গীয় দৃশ্য। ক্রমে ক্রমে আলোক উৎভাসিত হয়ে গেরুয়া বর্ণ ধারণ করলো চৌখাম্বা, মেরু, সুমেরু, গঙ্গোত্রী শ্রেণী। পেঁজা তুলোর মতো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা শরতের সাদা মেঘেও সেই আলোকস্পন্দন হল সঞ্চারিত। পলাশের আগুন লেগেছে যেন আজ হিমালয়ে। চোখের থেকে বড় ক্যামেরা আর হয় না। এ দৃশ্য শুধু অনুভূতির পঞ্চ প্রদীপে বরণ করা যায় মাত্র।

মদমহেশ্বর যাওয়ার আয়োজনের জন্য ঊখীমঠ থেকে উনিয়ানা যাওয়ার গাড়ি ঠিক করবো। শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়, কিন্তু ভর্তি না হলে ছাড়ে না। টাইম টেবিলের ব্যাপার নেই। তাই রিজার্ভ গাড়ি। পায়ে হেটে বের হলাম। ঊখীমঠ ভ্রমনও হবে, সাথে গাড়ি ঠিক করা। দর্শনীয় স্থানগুলির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয় মোটেই। সপ্তম শতকে তৈরী ওঙ্কারেশ্বর মন্দির এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য (ঐতিহাসিক মতে)। ওঙ্কারেশ্বর মন্দির ভারতের  প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। পৌরাণিক মতে, রাজা মান্ধাতা দ্বাদশ বৎসর একপায়ে দাঁড়িয়ে তপস্যা করে “ওঁ” রূপে মহাদেবের দর্শন পান এবং এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, তাই এই শিব-মন্দিরের নাম “ওঙ্কারেশ্বর”। মন্দিরের প্রাচীনত্ব চোখ টানে। প্রশস্ত মন্দিরের চাতাল, ওঙ্কারেশ্বর শিব ছাড়াও রয়েছে রাজা মান্ধাতার প্রস্তর মূর্তি। এই মন্দিরেই কালীপুজোর পর থেকে অক্ষয় তৃতীয়া অবধি ছয় মাস অবস্থান করেন এবং পুজো গ্রহণ করেন কেদারনাথ (প্রথম) ও মদমহেশ্বর (দ্বিতীয়) শিব। অক্ষয় তৃতীয়ার পর মে মাসে পঞ্চমুখী ডুলিতে করে কেদারনাথজী, কেদারযাত্রা করেন। আর প্রায় সপ্তাহখানেক পরে (এক বা দুই সপ্তাহ) মদমহেশ্বর শিব, একরাত রাশি গ্রামের রাকেশ্বরী (রাসেশ্বরী) মন্দিরে রাত্রি যাপন করে যাত্রা করেন মদমহেশ্বরে। কথিত আছে যে ঊষা আর অনিরুদ্ধর বিবাহ সম্পন্ন হয় এই স্থানেই। সেই বিবাহ মণ্ডপ দৃশ্যমান এই মন্দির প্রাঙ্গণেই। উল্লেখ্য, কেদারনাথ ও মদমহেশ্বর এর পুরোহিত বা রাউলরা এই ঊখীমঠেরই  বাসিন্দা।

ছবিগুলিতে মন্দাকিনী, রুদ্রপ্রয়াগের পরের পথ, ভাগীরথী, দেবপ্রয়াগ, অলকানন্দা, ঋষিকেশ – রাম ঝুলা, কেদারডোম এবং অজানা ঝর্না

এছাড়াও এখানে রয়েছে অগুন্তি মন্দির – ঊষা, অনিরুদ্ধ, শিব, পার্বতী প্রভৃতি দেব-দেবীগণের। তবে এই মন্দিরগুলির অধিকাংশতেই পর্যটকের পায়ের ধুলো পড়ে না। সাধারণ পর্যটক এই স্থানে খুব কমই আসেন। ট্রেকারদের-ই ভিড় বেশি। কারণ এখান থেকে তুঙ্গনাথ (তৃতীয় কেদার), মদমহেশ্বর, দেওরিয়া তাল প্রভৃতি ভ্রমণ সহজ। বেশির ভাগই শুধু রাতটুকু ঊখীমঠ-এ থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে পাড়ি দেয়। তাছাড়া এই সব মন্দিরগুলো যেমন অখ্যাত, তেমনি কতগুলিতে খাড়া সিঁড়ি ভেঙে বেশ উঁচুতে উঠতে হয়।  সর্বসাধারণের জন্য সে পথ নয়, বিশেষ করে বয়স্কদের পক্ষে। তবে সময় হাতে থাকলে, ইচ্ছাশক্তি সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়তে পারেন ওই সব জায়গায়। মূল ঊখীমঠের একটু বাইরেই মন্দাকিনীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ভারতসেবাশ্রম সংঘ। ঠিক পাশেই তাঁদের পরিচালিত স্কুল। হাতে সময় ছিল, তাই শেয়ার জীপ এ ঘুরে নিলাম গুপ্তকাশী। কথিত আছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর এস্থানেই নাকি কাশী থেকে এসে আত্মগোপন করেছিলেন মহাদেব। তাই নাম গুপ্তকাশী। আবার গুপ্তকাশী থেকে শেয়ার গড়ি করে পাড়ি দিলাম কালীমঠের উদ্দেশ্যে। কালিমঠ দিয়ে বয়ে চলেছে সবুজ স্বচ্ছ সরস্বতী নদী। কথিত, এই স্থানেই দেবী কালী বধ করেন রক্তবীজকে। দুটি মন্দিরই প্রাচীন এবং যথেষ্ট জনসমাগম এই জায়গা দুটিতে হয়। ঘুরে-বেড়িয়ে ঊখীমঠ ফিরতে ফিরতে সন্ধে নেমে গেলো। কাল থেকে শুরু হবে ট্রেক। তাই খাওয়া-দাওয়া করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ৮টা। ঊখীমঠ প্রায় সারা বছরই আসা যায়, তবে বর্ষাকাল বাদ দিয়ে আসাই বাঞ্ছনীয়। আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরই বেস্ট সিজন।

মাঝের কয়েকদিনের ট্রেক-ডাইরি উহ্যই থাক। আবার অন্য কোনোদিন সে গল্প করা যাবে। শুধু এতটুকু বলি যা ভেবেছিলাম, যা চেয়েছিলাম, তার চেয়ে পেয়েছিলাম অনেক অনেক বেশি। এবার ফেরার পালা। ঊখীমঠ কে বিদায় জানিয়ে ফিরছি হরিদ্বার। মন্দাকিনী-অলকানন্দা-গঙ্গার ধার ঘেষে একে একে পার হয়ে যায় রুদ্রপ্রয়াগ শ্রীনগর, দেবপ্রয়াগ। পাহাড় ভ্রমণ এমনিতেই বৈচিত্রময়। বাঁকে বাঁকে তার সৌন্দর্য। যদি  সর্বক্ষণ সঙ্গ দেয় নদী, তবে তা ভিন্ন মাত্রা পায়। গাড়োয়াল ভ্রমণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনাকে সঙ্গ দেবে নদী।  সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে নেমে এসেছি ঋষিকেশ। ওই দেখা যায় লক্ষণঝুলা, রামঝুলা। আর আধা ঘন্টা পরে হরিদ্বার ঢুকবো। শহরের গন্ধ লাগতে শুরু করেছে। কাল সকালে হরকিপৌরি ঘাটে গঙ্গা স্নান। কোনো এক দাদাবৌদির হোটেলে মধ্যাহ্নভোজন। তারপর হরিদ্বারের মার্কেটে ঘোড়াঘুড়ি করে হোটেলে ফেরা। রাত্রি বেলায় রুটি-তারকা খেয়ে দূন এক্সপ্রেস-এ ওঠা। ব্যাস, এবারের মতো যাত্রা শেষ।

(লেখাটির পিছনে বিশিষ্ট শিক্ষক শ্রী নারায়ণ ভট্টাচার্য্যের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তার মূল্যবান সময় ও শ্রম দিয়ে লেখাটিকে যথাসম্ভব মার্জিত ও ত্রুটিহীন করতে সাহায্য করেছেন। এছাড়া ভ্রমণ পথের দুই-তিনটি ছবি আমার সহকর্মী শ্রী অনিন্দ্য সেনের তোলা। এদের দুজনের প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ।)

Ukhimath 2 Featured Image 2

Featured image courtesy: Wikipedia (Wikimedia: Creative Commons)

সময় দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

Travellers Days Signature Image

Previous Trip To Puri
Next Mungpoo (মংপু)